আলোচিত
গুলশান হামলার তদন্ত প্রায় শেষ, চার্জশিটে থাকছে ২১ নাম

আলোচিত বার্তা : গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার দুই বছর পার হতে চলেছে। দীর্ঘ এই সময়েও মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। তবে পুলিশ বলছে, মামলাটির তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত করতে গিয়ে হামলার পরিকল্পনাকারী, অস্ত্র সরবরাহকারী, অর্থের যোগানদাতাসহ মোট ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৩ জন। বাকি আটজনের মধ্যে ৬ জন গ্রেফতার আছেন। এখনও পলাতক রয়েছেন দু’জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গুলশান হামলার মামলাটি এতটাই ব্যাপক এবং এর সঙ্গে এত লোক জড়িত যে, তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল। তবে এখন তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে। এক সপ্তাহ অথবা ১০ দিনের মধ্যে আদালতে এই মামলার চার্জশিট জমা দিতে পারব।
তিনি বলেন, মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অফিসাররা অনেক তথ্য পেয়েছেন। হঠাৎ করেই এই হামলা ঘটেনি। এর পেছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল। মামলার তদন্তে আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মামলাটি তদন্তকালে আমরা হামলার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করেছি। অস্ত্র সরবরাহকারী ও অর্থের যোগানদাতাদেরও সনাক্ত করা হয়েছে। হামলার প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িত সবার ব্যাপারে চার্জশিটে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। ওই হামলায় সরাসরিভাবে যারা জড়িত ছিল, তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলাটির তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। বাকি আটজনের মধ্যে ৬ জন গ্রেফতার, বাকি দু’জন এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।
চার্জশিটে নাম থাকা ২১ জঙ্গি কারা?
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হামলায় জড়িত যে ২১ জনের তথ্য দিয়ে চার্জশিট তৈরি হচ্ছে, সেই তালিকায় প্রথমেই থাকছে ৫ হামলাকারীর নাম। তারা হলেন নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল ওরফে বিকাশ।
এছাড়া চার্জশিটে নাম থাকছে এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া ছয় জঙ্গির। তারা হলেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী জঙ্গি সরবরাহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, পরিকল্পনা সহযোগী ও বাস্তবায়নকারী আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, অস্ত্র ও বোমা তৈরি এবং সরবরাহকারী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, হামলাকারীদের প্রশিক্ষক রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও অস্ত্র-বিস্ফোরকের বাহক মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। এই ছয় জঙ্গিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
চার্জশিটে নাম থাকছে পলাতক দুই জঙ্গিরও, যাদের গ্রেফতারে এখনো অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তারা হলেন হামলার পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মামুনুর রশীদ রিপন আর পরিকল্পনায় সহযোগিতা, বাস্তবায়ন ও হামলাকারী সরবরাহকারী শরীফুল ইসলাম খালিদ।
এ ছাড়া গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে ওই ঘটনায় জড়িত যারা নিহত হয়েছেন, তাদের নামও থাকছে চার্জশিটে। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানে নিহত গুলশান হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী, আরেক পরিকল্পনাকারী আশুলিয়ায় নিহত সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, আজিমপুরে হামলাকারীদের আশ্রয় ও অর্থদাতা তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, মোহাম্মদপুরে নিহত হামলার পরিকল্পনাকারী নূরুল ইসলাম মারজান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নিহত বাশারুজ্জামান চকোলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণদাতা মিরপুরের রূপনগরে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক।
প্রসঙ্গত, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে রোববার (১ জুলাই)। ভয়াবহ ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক প্রাণ হারান।
নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি, একজন ভারতীয়, ৯ ইতালীয় এবং সাতজন জাপানি নাগরিক। প্রায় ১২ ঘণ্টার ওই ‘জিম্মি সংকট’ শেষ হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে।
সূত্র:পরিবর্তন