আলোচিত
নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে রাইড শেয়ারিং

আলোচিত বার্তা : মুঠোফোনে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস অনেক নগরবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। গত দুই-আড়াই বছর ধরে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে অ্যাপ ভিত্তিক ভাড়ায় চলা যানবাহনে। শুরু থেকে উবার-পাঠাওসহ অ্যাপভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার বাইরে থাকলেও চলতি বছর নীতিমালা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনার দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)কে।
তবে এখনো পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি পাঠাও-উবারসহ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো। যাত্রা শুরুর পর থেকে অ্যাপভিত্তিক এসব রাইড প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে গ্রাহকদের কাছ থেকে।
তবে কোনো নীতিমালা না থাকায় গ্রাহকরা এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
গত কয়েক বছরে প্রায় এক ডজনেরও বেশি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। স্যাম, মুভ, উবার, পাঠাও, সহজ.কম, চলো, বাহন, গাড়ি ভাড়া, ডাকো, ওভাই, আমার বাইক, শেয়ার মোটরসাইকেল, বিডিবাইক, ইজিয়ার ও রাইডার রাজধানীতে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার যাত্রী পরিবহন সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সরকারি নীতিমালার আওতায় আসার জন্য মোট নয়টি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ’র কাছে আবেদন করেছে।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, এসব অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও এখনো পূর্ণ অনুমোদন পায়নি। তবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে অনুমোদন দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র পরিচালক (প্রকৌশল) নুরুল ইসলামের বরাতে এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার মো. শাহজাহান কবির বলেন, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পূর্ণ অনুমোদন পায়নি। সরকারি খসড়া অনুমোদন হওয়ার পর বিআরটিএ’কে দায়িত্ব দেয়া হয় বিষয়টি দেখভাল করার জন্য। এরপর আমাদের পরিচালক নিয়মিত বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
গত জানুয়ারি মাসে রাইড শেয়ারিং পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই নীতিমালার ৮টি অনুচ্ছেদে ১১টি শর্তও দেয়া হয়েছে।
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে ১. কোম্পানিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে তালিকাভুক্তির সনদ নিতে হবে। ২. অ্যাপসের মালিককে টিআইএনধারী হতে হবে এবং নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। আর কোম্পানি হলে জয়েন্ট স্টক থেকে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। ৩. নিজস্ব অফিস থাকতে হবে। ৪. ঢাকায় সেবা দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১০০, চট্টগ্রামে ৫০টি এবং অন্য জেলা শহরে ২০টি গাড়ি থাকতে হবে। ৫. গাড়িগুলোর বিআরটিএ থেকে ট্যাক্স পরিশোধ ও রুট পারমিট আপডেট থাকতে হবে। ৬. মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি থাকতে হবে। ৭. স্ট্যান্ডছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ৮. বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটে এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মালিক ও চালকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে। ৯. তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনের সঙ্গে এক লাখ টাকাসহ অন্যান্য ফি-জমা দিতে হবে। তালিকাভুক্তির মেয়াদ হবে তিন বছর। পরে এটি নবায়ন করতে হবে। নবায়ন ফি হবে ১০ হাজার টাকা। ১০. মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগ করা যাবে। ১১. শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তালিকাভুক্তির সনদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে মামলা করা যাবে।
সরকারের বেধে দেয়া এসব শর্ত ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মানছে কিনা এমন প্রশ্নে শাহজাহান কবির বলেন, এখনো তো পূর্ণ অনুমোদন পায়নি। এসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। আমরা এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অফিস পরিদর্শন করেছি। আমাদের ডিরেক্টর স্যার এটি নিয়ে বেশ নিখুঁতভাবে কাজ করছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান সব কাগজপত্র দিতে পারেনি তাদের পুনরায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নতুন করে তারা কাগজগুলো দিয়ে গেলে তাদের নিয়ে আবার কাজ করবো।
এদিকে অ্যাপভিত্তিক এই পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগও কম তুলছেন না গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে যাত্রীরা প্রায়ই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তুলে ধরেন। সেসব পোস্টের বরাতে জানা যায়, অনেক যাত্রীর সঙ্গে চালক অশোভন আচরণ করেন। তাছাড়া ডিসকাউন্ট থাকলে যাত্রীকে নিতে চান না। অনেক চালক যাত্রীর কাছে আসার আগেই যাত্রা শুরু করেন। আবার অনেকে পিক পয়েন্টে না এসে যাত্রীকে তার কাছাকাছি কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে বলেন।
সাজ্জাদ নামের এক উবারের যাত্রী বলেন, গত ২৭শে জুন আমি ধানমন্ডি রাফা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে উবারে কল দিয়েছি। আমার গন্তব্য ছিল বাড্ডা। এ সময় মোটরসাইকেলের চালক আমাকে রাফা প্লাজার বিপরীত পাশে আসতে বলেন। আমি না যেতে চাইলে রেগে যান। একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডাও হয় তার সঙ্গে। পরে আমি রাইড ক্যানসেল করে দিয়ে অন্য একজনকে নিয়ে বাসায় পৌঁছেছি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসিফের কথা- আমি উবার মোটরের নিয়মিত যাত্রী। মাঝে-মধ্যে পাঠাওতেও চলাচল করি। গত ৩০শে জুন গুলশান থেকে কাওরান বাজার আসবো। উবারের কল দিলে ওপাশ থেকে চালক আগেই জিজ্ঞাস করে বসেন আমি কোথায় যাবো। উবারে যাত্রী কোথায় যাবে না যাবে এমন তথ্য চালককে দেয়ার কোনো কথা না। অনেক সময় গন্তব্যস্থলের কথা বলে সেখানে যেতে রাজি হন না চালকরা। এসব নিয়ে প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়।
এদিকে যাত্রীদের এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়ে সবুজ আহমেদ নামের এক চালক বলেন, যাত্রীদের এসব অভিযোগ একেবারে মিথ্যা নয়। সমস্যা হলো, অনেক অ্যাপসে ডেস্টিনেশন দেয়া থাকে না। তাই জিজ্ঞাস করা। আর কিছুই না। আর পিক পয়েন্টে না যেতে রাইড চালু হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে এই চালক বলেন, এটা মাঝে-মধ্যে ভুলে ট্যাপ পড়ে গেলে রাইড স্টার্ট হয়ে যায়। তাই যাত্রীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
সূত্র:মানবজমিন