আলোচিত
এক নারীর জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে খুন করা হয় পুলিশ পরিদর্শককে?

আলোচিত বার্তা : পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত পরিদর্শক মামুন ইমরান খান (৪০)। গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় পরদিন সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার ভাই। তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নিবিড় তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, পূর্বপরিচিত এক নারীর জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত রোববার মামুনকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার একটি বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখানেই খুন হন তিনি।
পূর্বপরিচিত নারীর উপস্থিতিতে তার সহযোগীরা তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মামুনকে হত্যা করে। এরপর গাড়িতে করে মামুনের মরদেহ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লাশ গুম করার চেষ্টা চালায় তারা। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়েরদিয়া এলাকার একটি জঙ্গলে এনে লাশের হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে পুড়িয়ে ফেলে যায়। তার আগে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে তার চেহারা বিকৃত করা হয়। তিন দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে মামুনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত এক নারীকে যশোর সীমান্ত হয়ে দেশের বাইরে পালানোর সময় আটক করা হয়েছে।
তবে তদন্তের এ পর্যায়ে অভিযুক্ত ওই নারীর নাম কিংবা হত্যার কারণ স্পষ্ট করেনি সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো। প্রেমঘটিত, না কি অন্য কোনো বিরোধে এ হত্যা করা হয়েছে, তাও পরিস্কার করে জানাচ্ছেন না তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। তবে হত্যার কেন্দ্রে একজন নারী রয়েছেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সন্দেহভাজন নারীকে যশোর থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘গাজীপুর থেকে উদ্ধার করা লাশটি এসবির পরিদর্শক মামুনের। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনও পরিস্কারভাবে বলা যাচ্ছে না। দ্রুতই বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘মামুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।’
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, ‘নিহত পুলিশ কর্মকর্তা এসবির ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শক ছিলেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে।’
নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, মামুনের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জের রাজরামপুরে। তার বাবা মৃত আজহার আলী খান। মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। ২০০৫ সালে এসআই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল শান্তিনগরে পুলিশের বিশেষ শাখার ট্রেনিং স্কুল। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করেছেন। অবিবাহিত মামুন বড় ভাইয়ের সঙ্গে সবুজবাগে বসবাস করতেন। চাকরির পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করতেন তিনি।
সবুজবাগ থানার ওসি কুদ্দুস ফকির বলেন, ‘মামুন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে। মঙ্গলবার হঠাৎ খবর আসে গাজীপুরে তার লাশ পাওয়া গেছে।’
মামুনের হত্যার কথা জানাজানি হওয়ার পর মাহমুদুল হাসান জুয়েল নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘কী লিখব বুঝতে পারছি না। কাছের এমন একজন বড় ভাই এভাবে ছেড়ে চলে যাবে তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। খুব হাসিখুশি ও সাদা মনের মানুষ ছিলো।’
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…
পুলিশ ইন্সপেক্টরকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা!
তথ্যসূত্র: সমকাল